ভাইরাল ‘সান্ডা’ ট্রেন্ড: কী, কেন, ইসলাম এবং প্রবাসীদের বাস্তবতা সাজুগুজু ২৪

ভাইরাল ‘সান্ডা’ ট্রেন্ড: কী, কেন, ইসলাম এবং প্রবাসীদের বাস্তবতা

 

ভাইরাল সান্ডা, ইসলাম ও কফিল
ভাইরাল মরুভূমির কফিলের সান্ডা

সৌন্দর্যব্লগের জন্য সাজানো ‘সান্ডা’ ভাইরাল ট্রেন্ড বিশ্লেষণ: মজার ছলে শুরু, বাস্তবতার ছোঁয়ায় ভাইরাল

সম্প্রতি ফেসবুকজুড়ে ঝড় তুলেছে এক আশ্চর্য প্রাণীর নাম—সান্ডা। শুরুটা ছিল মজা-মশকরার ভিডিও আর কিছু রিলস, এখন তা পরিণত হয়েছে এক অনন্য ট্রেন্ডে। টাইমলাইনে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে, “সান্ডা রান্না”, “সান্ডা ধরার টেকনিক”, “কফিলকে খুশি করতে সান্ডা বিরিয়ানি”, এমনকি মজার মিমে "সান্ডা খাইয়ে কফিলের মেয়ের মন জয়"—এসব যেন নিত্যদিনের রিলস-ডোজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই সান্ডা আসলে কী? কেন হঠাৎ এত জনপ্রিয়?


সান্ডা কী?

সান্ডা (বৈজ্ঞানিক নাম: Uromastyx) একধরনের মরুপ্রাণী, দেখতে অনেকটা গুইসাপের মতো, তবে এটি আরও ছোটখাটো এবং নিরীহ। এই প্রাণীটি মূলত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে বাস করে। লেজে রয়েছে কাটার মতো খাঁজ, যা আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়।

খাবারের দিক থেকে সান্ডা নিরামিষভোজী। ফুল, গাছের পাতা, বীজ ইত্যাদি খায়, কখনও কখনও পোকামাকড়ও। গুইসাপের মতো হিংস্র নয়, বরং বেশ ধীরস্থির ও নিরীহ স্বভাবের প্রাণী এটি।


সান্ডার সঙ্গে “কফিল” যোগসূত্র

কফিল হলো সেই ব্যক্তি, যিনি সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি কর্মীদের স্পনসর করেন। অনেক সময় কফিলরা ব্যতিক্রমী খাবার খেতে পছন্দ করেন, আর সেখানেই আসে সান্ডার ভূমিকা।

একজন প্রবাসী ভাই নিয়মিত ফেসবুকে আপলোড করছেন কিভাবে তিনি মরুভূমিতে সান্ডা ধরেন, রান্না করেন এবং কফিলকে খাওয়ান। কফিল খুশি হয়ে বকশিস দেন, কখনো নতুন মোবাইল, কখনো ক্যাশ। তার ভিডিওতে প্রতিদিন উঠে আসে —
“আজ কফিল কত খুশি হলো”,
“আজ কত বখশিশ পেলাম”,
“সান্ডা ধরতে গিয়ে মরুভূমিতে কত দৌড় দিলাম।”


কেন ভাইরাল হলো?

এই ভিডিওগুলোতে একদিকে রয়েছে কৌতুকের রস, অন্যদিকে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। অনেকেই বলছেন, “ভাই, এখন তো ভিসা পাওয়ার উপায় হচ্ছে সান্ডা বিরিয়ানি রান্না।” কেউ মজা করে বলছেন, “ভাল চাকরি চাইলে আগে মরুতে দৌড় দিতে শিখো।”

আসলে এই সব ভিডিও আর মিমের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে প্রবাসীদের কঠিন বাস্তবতা—কিভাবে তারা কফিলকে খুশি রাখতে অদ্ভুত সব কাজ করছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম তাতে আগুন লাগিয়েছে। প্রচার হলো—

  • “সান্ডা তেল খেলে শক্তি বাড়ে”,
  • “একেকটা সান্ডার দাম হাজার হাজার টাকা”,
  • “সান্ডা খাওয়ালে নাকি কফিল মেয়ের বিয়ে পর্যন্ত দিয়ে দেন!”

এসব দাবির অনেকটাই গুজব ও অতিরঞ্জিত, কিন্তু মিম-ভিডিওগুলোতে এমন নাটকীয়তা থাকায় তা দ্রুত ভাইরাল হয়।


সান্ডা তেল: মিথ না বাস্তবতা?

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় সান্ডার তেল ব্যবহৃত হয় বলে শোনা যায়। এটি যৌন শক্তি বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে প্রচারিত হলেও বৈজ্ঞানিকভাবে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত নয়। তবে পাকিস্তান, ভারত, এমনকি বাংলাদেশের গ্রামীণ হাটে এটি বিক্রি হতে দেখা যায়।


ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও হালাল-হারাম বিতর্ক

ইসলামে এই প্রাণী নিয়ে মতভেদ আছে। হাদিসে পাওয়া যায়, নবী করিম (সা.) নিজে সান্ডা খাননি, তবে খেতে নিষেধও করেননি।

  • হানাফি মাজহাবে: সান্ডা খাওয়া মাকরুহ বা নিন্দনীয়
  • হানবালি ও মালিকি মাজহাবে: কিছুটা শিথিলতা রয়েছে।

বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক অভিঘাত

প্রবাসীদের বাস্তবতা, মরু জীবনের অনন্যতা, আর সোশ্যাল মিডিয়ার সেনসেশন—সব মিলিয়ে সান্ডা এখন একটি ‘কালচারাল আইকন’ হয়ে উঠেছে। অনেকে এটাকে নিছক বিনোদন মনে করলেও, অনেকেই বলছেন, “এই ভিডিওগুলো আমাদের শ্রমজীবী ভাইদের গল্প বলে, একটু হাসির মোড়কে।”


শেষ কথা

প্রাণীজগতে সান্ডা একটি নিরীহ সদস্য। কিন্তু মানুষের কল্পনা, বাস্তবতা, ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চমৎকার মিশেলে আজ সেটিই ট্রেন্ডিং সেনসেশন
তবে সতর্কতা জরুরি—বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন এবং আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বিষয়েও আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

সৌন্দর্য আর সংস্কৃতির ব্লগে এমন ভাইরাল ট্রেন্ড বিশ্লেষণ আমাদের সমাজের রুচি, প্রবাসী জীবনের প্রতিচ্ছবি এবং মিডিয়া মনস্তত্ত্ব বুঝতে সাহায্য করে।

আপনিও কি সান্ডার ভাইরাল ট্রেন্ডে কিছু চোখে পড়া কনটেন্ট দেখেছেন? নিচে মন্তব্য করে জানাতে ভুলবেন না!

Shana Novak থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.