বিয়ের প্রস্তুতি পর্ব ৬: বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন নিজেকে সামলানো
আগের পর্ব: সকল পর্ব একসাথে
- বিয়ের প্রস্তুতি পর্ব ১: “বিয়ে ঠিক হলো, এখন আপনি কী করবেন?”
- বিয়ের প্রস্তুতি পর্ব ২: বিয়ের এক মাস আগে: নিজেকে গড়ে তোলার সময়
- বিয়ের প্রস্তুতি পর্ব ৩: “বিয়ের এক সপ্তাহ আগে: শেষ মুহূর্তের Glow-Up”
- বিয়ের প্রস্তুতি পর্ব ৪: বিয়ের আগের রাত — ভয়কে বিদায়, ভালবাসায় স্বাগত
- বিয়ের প্রস্তুতি পর্ব ৫: বিয়ের সকাল — উজ্জ্বল চোখে নতুন জীবনের পথে
বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন নিজেকে সামলানো
(যখন চোখ থাকবে আপনার দিকে, আর আপনি খুঁজবেন একটু স্বস্তি)
ভূমিকা
বিয়ের মঞ্চটা যেন এক রঙিন নাট্যমঞ্চ—সবার চোখ আপনার দিকে,
ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে উঠছে একের পর এক,
আর আপনি সেই কেন্দ্রীয় চরিত্র,
যার হাসি, ভঙ্গি, তাকানো, এমনকি নিঃশ্বাসটাও যেন রেকর্ড হচ্ছে।
এই সময়ে কারও মুখে ক্লান্তি দেখানো মানেই হাজারটা প্রশ্ন—
“মন খারাপ নাকি?”, “সব ঠিক তো?”, “উনি কি কথা বললেন কিছু?”
অথচ ভিতরে ভিতরে হয়তো আপনি চাইছেন একটু বসতে, একটু নিঃশ্বাস নিতে।
এই অংশে আমরা বলবো—
- কীভাবে নিজেকে ঠাণ্ডা, হাস্যোজ্জ্বল ও পরিপাটি রাখা যায়, যখন ভিতরে চলে বিশাল এক মানসিক যুদ্ধ।
- কীভাবে মুখে হাসি রেখে, নিজের ছোট ছোট চাহিদাগুলো (যেমন একটু পানি, একটু ছায়া, একটু বিরতি) কৌশলে পূরণ করা যায়।
- এবং সবচেয়ে জরুরি, নিজেকে চাপমুক্ত রাখা, যাতে অনুষ্ঠানের স্মৃতিগুলো আনন্দে রাঙানো থাকে, ক্লান্তিতে না।
এই দিনটা আপনার—তাই গ্ল্যামারের বাইরেও নিজেকে স্বস্তিতে রাখা আপনার অধিকার।
চলো জেনে নিই, কীভাবে এই রঙিন বিশৃঙ্খলায় নিজেকে সামলে রাখবেন শান্ত, আত্মবিশ্বাসী এক নববধূর মতো।
১. মানসিক চাপ ও স্টেজ ফ্রাইট সামলানো
সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো ব্যক্তি আপনি। আপনাকে ঘিরেই ক্যামেরা, অতিথি, গুঞ্জন আর মিষ্টি প্রশংসার ঢল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আপনি হয়তো ভাবছেন—“সবাই আমাকেই দেখছে!”
এটা স্বাভাবিক।
শ্বাস নিন গভীরভাবে। মনে রাখবেন, আপনি কোনও পরীক্ষা দিচ্ছেন না—এটা আপনার দিন।
নিজেকে মনে করান: “আমি প্রস্তুত, আমি প্রিয়, আমি সুন্দর।”
আর স্টেজে গেলে বা কারও সামনে পড়লে, চোখ নিচে না রেখে চোখের কোণে কোমল হাসি ধরে রাখুন। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
২. লম্বা সময় বসে থাকা ও ক্লান্তি এড়ানো কৌশল
অনুষ্ঠানে বসে থাকতে থাকতে কোমর, পা আর ঘাড়ে অস্বস্তি আসতে পারে।
টিপস:
- চেয়ার বা সিংহাসনে বসার আগে একটা মালমাল বা তুলতুলে স্কার্ফ পেছনে গুঁজে নিন। পিঠ ব্যথা কমবে।
- সময় পেলে দুই-এক মিনিট দাঁড়িয়ে পেছনে হেঁটে আবার বসুন।
- হাতের আঙুল ও পায়ের পাতা মাঝে মাঝে নড়ান। এতে রক্ত চলাচল ঠিক থাকবে।
৩. খাওয়া-দাওয়া ও পানীয় ব্যবস্থাপনা
অনেকে মনে করে কনে কিছু খায় না। ভুল ধারণা।
শক্তি দরকার—বিশেষত যদি বাসর বা পরদিন অনেক কিছুর চাপ থাকে।
- অন্তত দুই-তিন ঘণ্টা পরপর পানি খান। চুপিচুপি Straw দিয়ে।
- ডাবের পানি বা গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ।
- খাবারের মধ্যে একটু পোলাও, এক টুকরো মুরগি বা ফ্রুটস খান—সরাসরি না খেয়ে কন্যাসংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা কেউ গোপনে এনে দিতে পারে।
৪. চোখ, ঠোঁট, মুখের Makeup touch-up হ্যাকস
আপনার ফোটোশুট চলছে পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে। একটু ঘাম, একটু পানি খেলেই ঠোঁট ফিকে, চোখ ছড়ানো!
- লিপস্টিক ফেড হয়ে গেলে গালে হালকা রঙ লেগে যায়—সেজন্য ব্যাগে রাখুন একটা ছোট কিউট টাচ-আপ কিট।
- যদি কেউ না থাকে, নিজের হ্যান্ডব্যাগে রাখুন:
- Compact পাউডার
- Mini লিপস্টিক
- ব্লটিং পেপার
- ছোট আয়না
- সেফটি পিন
রহস্য: ফ্রেশ চেহারা = বাসরের আগের আত্মবিশ্বাস!
৫. বাসর ও পরদিনের জন্য শারীরিক শক্তি ধরে রাখা (অ্যাকাডেমিক ভাষায়)
অনেক মেয়েই বাসরের রাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে যান। আর তারপরদিনের ফটোশুট বা বিদায় অনুষ্ঠানেও হাপিয়ে যান।
তাই সারাদিন নিজেকে শক্তির মধ্যে রাখতে খাওয়া, বিশ্রাম, ও নিজস্ব জায়গার সুযোগ খুঁজতে হবে।
- অল্প সময়ের Power Nap নিতে পারলে, সেটা স্বর্গ!
- মুখে হাসি থাকলেও ভেতরে ব্যথা বা অস্বস্তি হলে, সেটা ইগনোর করবেন না।
- আপনার শরীরকে বোঝেন, সম্মান দিন। স্বামীকে আগেই বলুন—“আজকের রাত যেন হোক আমাদের আরামের, ভালোবাসার, না যে কোনও চাপে।”
৬. অতিথি সামলানোর কৌশল ও নিরাপদ ব্যক্তিগত জায়গা তৈরি
সবাই ছবি তুলতে চায়, কথা বলতে চায়, কিছু বলবে বা জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু আপনি মানুষ—রোবট নন।
- কাউকে দায়িত্ব দিন—একজন চাচি, বোন বা বান্ধবী—যে বলবে, “একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন” বা “মেকআপ ঠিক করছেন”
- টয়লেট বা ওয়ারড্রোবের পাশে একটা নিরিবিলি ঘর নির্দিষ্ট করুন, যেখানে গেলে ১০ মিনিটের জন্য নিজেকে ‘পুনরুদ্ধার’ করতে পারেন।
শেষ কথা:
আপনি আজকের গল্পের রানি।
একজন রানিও মাঝে মাঝে তার ঘোমটা একটু তুলে নিঃশ্বাস নেন, আয়নায় চোখ রাখেন, চোখের কোণে আত্মবিশ্বাস রাখেন।
নিজেকে ‘তৈরি’ করতে গিয়ে নিজের ভেতরের মানুষটাকেও সময় দিন।