এই গরমে ত্বকের যত্নে নান্দনিক চন্দনকাঠ সাজুগুজু ২৪

এই গরমে ত্বকের যত্নে নান্দনিক চন্দনকাঠ

মানুষের একটু বাড়তি রূপচর্চা দরকার হয় গরমের সময়টাতে । ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় চন্দন। অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করবে। রূপচর্চায় চন্দনের ব্যবহার করা হলে পরবর্তীকালে ত্বক ঠান্ডা পরশও পায়। রূপবিশেষজ্ঞরা এটিকে সব গুণে গুণান্বিত একটি উপাদান হিসেবেই দেখে থাকেন।


চন্দনগাছের কাঠ শুকিয়ে গুঁড়া করে পাওয়া যায় চন্দনগুঁড়া বা স্যান্ডেলউড পাউডার। ত্বক পরিষ্কার করা, উজ্জ্বল করা, রোদে পোড়া ভাব দূর করা, ত্বককে সজীব করে তোলা ছাড়াও অসংখ্য গুণ আছে এই উপকরণটির।
চন্দন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বকের ক্লান্তিভাব দূর করে। ব্রণ বা ত্বকের দাগ দূর করে। ত্বকের ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সাহায্য করে। চন্দনের সঠিক ব্যবহার ত্বকে কোমলতা এনে দেয়। যাদের ত্বক বয়সের কারণে ঝুলে গেছে, তাদের জন্য চন্দন বেশ উপকারী। কারণ, এটি ত্বককে টানটান রাখে। তবে রূপচর্চা থেকে সঠিক ফল পেতে হলে অবশ্যই সঠিক উপায়ে কাজটি করা প্রয়োজন।



হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, সাধারণত ত্বকের কয়েকটি শ্রেণি থাকে। শুষ্ক ত্বক, তৈলাক্ত ত্বক ও সংবেদনশীল ত্বক এই তিন ধরনের ত্বকের জন্য চন্দনকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করতে হবে।


তৈলাক্ত ত্বকে চন্দনের ব্যবহার: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য চন্দনের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে হাতে, পায়ে, মুখে ব্যবহার করা যায়। চন্দনের মধ্যে এমন আয়ুর্বেদিক গুণ আছে, যেটি ত্বককে আরও গভীরে গিয়ে পরিষ্কার করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।


শুষ্ক ত্বকে চন্দনের ব্যবহার: শুষ্ক ত্বকের জন্য বাড়তি ময়েশ্চারাইজার দরকার হয়। চন্দন ত্বককে হালকা টানটান করে দেয়। তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য চন্দনের সঙ্গে মধু ও দুধ ব্যবহার করা ভালো। দুধে আছে ল্যাকটোজেন ও মধুতে অ্যান্টিবায়োটিক। চন্দনের সঙ্গে এই দুটি উপাদান মিশিয়ে মুখ, হাত ও পায়ের ত্বকে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।


চন্দন একটি সুগন্ধি গাছের নাম, এটি সবচাইতে বেশি পাওয়া যায় ভারতে, এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশেও এই সুগন্ধি গাছ পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতে চন্দনকে পুণ্য অর্জনের উপকরণ হিসেবে সম্মান করা হতো। সেকালে কপালে চন্দনের ফোঁটা ছাড়া পুজা শুদ্ধ হতো না। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ক্ষেত্রেও চন্দন বহুল ব্যবহৃত হতো। আর সৌন্দর্য চর্চায় চন্দন এর কোনো প্রতিপক্ষ ছিলো না।
চন্দনের আছে হাজারো ঔষুধি গুনাগুন। রূপ চর্চার জন্য চন্দনের খ্যাতি যুগ যুগ ধরে। প্রাচীন কালে রূপ চর্চার অন্যতম একটি উপাদান ছিলো চন্দন। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন রকম কসমেটিক্স ও সুগন্ধীতে চন্দন ব্যবহৃত হয়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় চন্দন বেশ উপকারী। এতে আছে অ্যান্টিব্যকটেরিয়াল উপাদান যা ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
চলুন জেনে নেই চন্দনের কিছু সাধারণ ব্যবহার ও গুণাবলী:


১। বলি রেখা দূর করে:
চন্দন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমূহের সমন্বয়ে গঠিত যা আপনার মুখের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এর বিরোধী প্রদাহজনক এজেন্ট আছে, যা বলি রেখা দূর করতে সাহায্য করে। চন্দন একটি চমৎকার anti-aging উৎস হিসেবে পরিচিত।


২। রোদে পোড়া দাগ দূর করে:
রোদে পোড়া ভাব দূর করতে চন্দন বেশ উপকারী। শসার রস, চন্দনের গুঁড়ো, দই ও গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে রোদে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এই ফেস প্যাক রোদে পোড়া ভাব কমাবে এবং রোদের পোড়ার কারণে ত্বক জ্বলা কমাবে।


৩। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়:
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চন্দনের জুড়ি নেই। মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য হলুদ বাটা ও চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে লাগান। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হবে।


৪। ডার্ক সার্কেল দূর করে:
আপনার যদি ডার্ক সার্কেল থাকে তাহলে অল্প পরিমাণ চন্দনের গুরার সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে চোখের চারপাশে লাগান। সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এক সপ্তাহের মধ্যে চোখের চারপাশের কজাল দাগ দূর হোয়ে যাবে।


৫। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়:
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে ১চা চামচ সাদা চন্দন কাঠের পেস্ট নিয়ে, আধা কাপ দুধের সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। আবার এই চন্দনযুক্ত দুধ খালিপেটে পান করুন। এরপর ৭-৮টি তুলসী পাতা চিবিয়ে নিন। কিছু সময়ের মধ্যেই রক্তচাপ কমে আসবে। ব্রঙ্কাইটিস রোগের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করলে উপকার পায়া যাবে।


৬। মুখের দাগ দূর করে:
ডিমের কুসুম বা মধু, ও চন্দন গুঁড়া একসাথে পেস্ট মিক্সড করে লাগালে মুখের দাগ দূর হয়। প্রতিদিন দুই চা চামচ চন্দনের গুঁড়ো ও গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার এই প্যাক মুখে লাগিয়ে নিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। এভাবে প্রতিদিন রাখলে মুখের দাগ দূর হবে ও ত্বক উজ্জ্বল হবে।

posted from Bloggeroid

Shana Novak থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.
get this widget