পিরিয়ডের সময় মুড সুইং: সচেতন হতে হবে পুরুষকে (Mood swings during periods: Men need to be aware)
নারীর শরীর প্রতিমাসে যে রকম শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়, তার সঙ্গে মানসিক এক টানাপড়েন চলতেই থাকে। এই মেজাজের উঠানামা—মুড সুইং—অনেক সময় এমন জায়গায় পৌঁছে যায়, যা পার্টনার বা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের জন্যও ধোঁয়াশার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
এটা একদিনের না, বরং মাসে মাসে ঘুরে আসে। পিরিয়ডের সময় নারীর মনে নানান ধরণের অনুভূতির জোয়ার-ভাটা আসে—কখনো কান্না পায়, কখনো রাগ হয়, আবার হঠাৎ হঠাৎ হাসিও আসে। বিষয়টা শুনতে সহজ লাগলেও, সেই সময় নারীর পাশে থাকা, বুঝে ওঠা এবং না-জাজমেন্টাল থাকা একজন পুরুষের মানবিক দায়িত্ব।
এই লেখায় থাকছে—
- পিরিয়ডের সময় কেন মুড সুইং হয়?
- একজন পুরুষ কীভাবে বুঝবেন ও সহানুভূতি দেখাবেন
- কী করবেন আর কী করবেন না
- সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে এই সময়টায় কীভাবে পাশে থাকবেন
মুড সুইং হয় কেন?
মাসিকের সময় হরমোনের ওঠানামা, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, নারীর মস্তিষ্কের সেরোটোনিন লেভেলকে প্রভাবিত করে। সেরোটোনিন হচ্ছে সেই “ভালো লাগা” কেমিক্যাল, যা কমে গেলে মন খারাপ, হতাশা বা রাগ অনুভব হয়।
এই কারণেই—
- হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যেতে পারে
- আগের ছোট কথা নিয়েই বড় প্রতিক্রিয়া আসতে পারে
- ক্লান্তি, অস্থিরতা, কান্না বা গুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়
একজন পুরুষের করণীয় কী?
১. বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন, বিচার করবেন না
“তুমি তো এত রেগে যাচ্ছো কেন?”, “এটা তো এমন কিছু না”—এ ধরনের কথা নারীর অনুভূতিকে হালকা করে দেয়।
বরং বলুন:
“তোমার মন খারাপ লাগছে বুঝতে পারছি, আমি পাশে আছি।”
২. একটু স্পেস দিন, আবার খুব দূরে নয়
অনেক নারী এই সময়ে একা থাকতে চায়, আবার কারো ঘনিষ্ঠ উপস্থিতিও চায়। এই ভারসাম্যটা বুঝতে চেষ্টা করুন।
৩. কথা বলার সুযোগ দিন
শুনুন, মাঝখানে বাধা দেবেন না। কথা শোনার মধ্যেই অনেকটা মুড হালকা হয়ে যায়।
৪. ছোট ছোট যত্ন
চা বানিয়ে দেওয়া, চকলেট বা তার প্রিয় কিছু এনে দেওয়া, অথবা হালকা ম্যাসাজ—এইসব ছোট পদক্ষেপ অনেক বড় প্রশান্তি এনে দিতে পারে।
কী করবেন না—খেয়াল রাখবেন
- তুচ্ছ করবেন না: “এইসব পিরিয়ডের বাহানা” বললে সম্পর্কেই ফাটল ধরবে।
- হাস্যকর করে তুলবেন না: শরীর ও মনের কষ্ট হাসির বিষয় নয়।
- “নেতিবাচক ট্যাগ” দেবেন না: “তুমি অনেক মুডি হয়ে গেছো” জাতীয় কথা নারীর আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে।
সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে এই সময়টাই সেরা
কারণ এই সময় নারী সবচেয়ে বেশি চাই তাঁর পার্টনারের সহানুভূতি ও বোঝাপড়া।
যে পুরুষ এই সময়ে পাশে থাকে—
- সম্পর্ক হয় গভীর
- তৈরি হয় ভরসা ও ভালোবাসার নতুন স্তর
- ছোটখাটো ঝগড়াও সহজে মাফ হয়ে যায়
FAQs
নারীর মুড সুইং সব সময় পিরিয়ডের কারণেই হয়?
না, স্ট্রেস, ঘুমের অভাব, অন্য শারীরিক সমস্যা থাকলেও মুড সুইং হতে পারে।
কীভাবে বুঝবো সে পিরিয়ডে আছে?
ইশারা হতে পারে—তলপেটে হাত রাখা, বারবার ক্লান্তির কথা বলা, হালকা মাথাব্যথা, খাবারে অনীহা।
এই সময়ে যৌনসম্পর্কের বিষয়ে কী করণীয়?
সবচেয়ে ভালো—তাকে জিজ্ঞেস করা, তার ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া।
সারপ্রাইজ দিতে চাই, কী দিতে পারি?
উত্তম হবে—হিট প্যাড, প্রিয় খাবার, একগুচ্ছ ফুল বা একটি ছোট নোট “তুমি যেমন, তেমন করেই সুন্দর”।
উপসংহার
পিরিয়ডের মুড সুইং নারীর কল্পনা নয়, এটা বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তব বিষয়।
আর একজন পুরুষ যদি সত্যিকারের বন্ধু হতে চান, তবে এই সময়ে বোঝা, সহানুভূতি, আরেকটু যত্নই হতে পারে তাঁর সবচেয়ে বড় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
নারীর শরীর আর মন, দুটোই পূর্ণ সম্মানের দাবিদার। বুঝুন, পাশে থাকুন, সম্পর্ক গড়ে তুলুন হৃদয়ের গভীর থেকে।